শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি: শ্রীনগরে কোনও ভাবেই বন্ধ হচ্ছেনা পদ্মা চরের মাটি লুট। একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট মহলের কারসাজিতে ভাগ্যকুল ইউনিয়নের দক্ষিন কামারগাঁও ধোপার বাড়ি সংলগ্ন পদ্মা নদীর তীর ঘেষা চরের মাটি হরিলুট করছে। ওই চরের বিভিন্ন স্থান থেকে ফসলি জমির মাটি অবৈধভাবে দীর্ঘদিন যাবত মাটি কেটে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে আসছে। প্রতিদিন ওই স্থান থেকে ছোট বড় দেড় থেকে দুই শত ট্রলি মাটি কাটা হচ্ছে। কামারগাঁও এলাকার হারুন খানের ছেলে মো. দিপু খানের (৪৫) নেতৃত্বে তার ছোট ভাই রকি খান (৩০), ওই এলাকার মাসাদুর (৪০) সহ বেশ কয়েক জনের একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তার বিভিন্ন কৌশলে নানা অজুহাতে নিজেদের পত্রিক সম্পত্তি দাবী করে এতোদিন চরের মাটি লুট করে আসেছে। লক্ষ্য করা গেছে, চরে মাটি কেটে প্রায় ১৫-২০ ফুট গভীর করা হচ্ছে। এতে করে সমতল চরের বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় অনেক পুকুর বা দিঘীতে পরিনত হয়েছে। এর আগেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে পদ্মার চরের মাটি লুটের বিষয়ে একাধিক পত্র পত্রিকায় গুরুত্বের সাথে প্রতিবেদ প্রকাশিত হলে ওই এলাকার মাটি খোর কামাল কিছুটা থামলেও দ্বিপু খান সিন্ডিকেট মাটি লুটে আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সিন্ডিকেট মহলটি এলাকায় বলে বেড়াচ্ছে তারা মাটি কাটার অনুমতি এনেছে। তাই চরের মাটি কাটতে তাদের কোনও সমস্যা নেই।
এই বিষয়ে দ্বিপু খান বলেন, উপজেলা পরিষদের ইউএনও অফিস থেকে মাটি কাটার অনুমোতি এনেছেন। তাই তিনি মাটি কাটছেন। তিনি আরো বলেন, চরে তার নিজের জমি আছে। জমির খাজনা সব পরিশোধ করা রয়েছে। তিনি দম্ভ করে আরো বলেন, মাটি কাটবোই আপনারা লেখালেখি করে যা পারেন করেন গা। কোনও সমস্যা নাই। দ্বিপুর ছোট ভাই রকি খান দাবী করে বলেন, এই জায়গা তাদের পত্রিক সম্পত্তি। তাদের মাটি কাটার অনুমোতি আছে। চরের মাটি কাটার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরিত কোনও ছাড়পত্র বা অর্ডার আছে কিনা এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি কোনও সুদত্তর দিতে পারেনি। অপর মাটি খেকু মাসাদুলের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দ্বিপু খানের বরাত দিয়ে সটকে পড়েন।
কয়েকজন শ্রমিকের সাথে আলাপ করে ও এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, দৈনিক ট্রলি প্রতি ৮-১০টি করে টিপ দেন তিনি। এক ট্রলি মাটি কাটতে কয়েজনের ২০-২৫ মিনিট সময় লাগে। ট্রলির মালিক প্রতি ট্রলি মাটির জন্য পান ২৫০-৩০০ টাকা। এককটি ট্রলিতে ৪-৭ জন করে শ্রমিক রয়েছে। মাটির সিন্ডিকেট মহল পায় ট্রলি প্রতি ১০০ টাকা। ছোট এক ট্রলি মাটির দাম পড়ে ৫০০ টাকা। বড় এক ট্রলি মাটির বিক্রি হয় ৭০-১০০০ টাকা। দুরুত্ব ভেদে এর দাম আরো বেশী হতে পারে। এই মাটি বিক্রির জন্য আলাদাভাবে লোক রয়েছে। তারাও কমিশনে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে মাটি বিক্রির কাজ করেন। মুলত প্রভাবশালী জমির দাবিদার, ট্রলির মালিক ও শ্রমিকরা মিলে একটি পুরো সিন্ডিকেট। তারা একে অপরের সহযোগিতায় চরের মাটি হরিলুট করে বিক্রি করে দিচ্ছে। এছাড়াও দ্বীপু স্থানীয় ভাবে প্রভাবশালী হওয়াতে তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চাননা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাম্মৎ রহিমা আক্তারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাল বা চরের মাটি কাটার অনুমোতি দেয়ার কোনও প্রশ্নই আসেনা। আমি এখনই লোক পাঠাচ্ছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
