তা জুল ইসলাম রাকীব,লৌহজংপ্রতিনিধিঃ মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় ধর্ষণের শিকার এক ছাত্রীকে (১৩) প্রধান শিক্ষক স্কুলে যেতে নিষেধ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার মেদিনীম-ল ইউনিয়নে উত্তর যশলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামীমা আক্তারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন নির্যাতিতার মা। তবে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমি তাকে কিছু দিন স্কুলে আসতে নিষেধ করেছিলাম।’ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় প্রধান শিক্ষক ও ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো: হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। অপরদিকে ধর্ষিতা শিশুর বাড়িতে পরিদর্শণে গিয়ে নিজের বোনের স্বীকৃতি দেন অফিসার এবং নির্যাতিত মেয়েটির সকল দায় দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ধর্ষিতা শিশু পরিবারের সাথে দেখা করতে গেলে সেখানে শত শত নারী পুরুষ উপস্থিত হয়। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন, লৌহজং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল কাদের মিয়া, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রীনা আক্তার, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হাজী আশরাফ হোসেন খান, ১নং ওয়ার্ড মেম্বার হারুন অর রশিদ প্রমুখ। নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর মা জানান, গত ৮ জুলাই তার মেয়েকে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে প্রধান শিক্ষক তাকে ডেকে নিয়ে মেয়েকে আর স্কুলে পাঠাতে নিষেধ করেন। তবে তিনি মেয়েকে যদি মাদ্রাসায় পড়ান তাহলে তাকে ছাড়পত্র দেবেন বলে তিনি আশ্বাস দেন। এ ব্যাপারে রবিবার লৌহজং উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খাঁন বলেন,‘আমরা অভিযোগ পাওয়া পর ওই প্রধান শিক্ষককে ডেকে ছিলাম। শিক্ষিকার মৌখিক ব্যাখ্যা সন্তোষজনক নয়। আমরা তাকে শোকজ করেছি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টা প্রক্রিয়াধীন আছে।’ ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো: হারুন অর রশিদকেও শোকজ করা হয়েছে।
ওই শিক্ষিকাকে ফোন দেওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি এখনও ইউএনও অফিসে আছি এবং একটু ব্যস্ত।‘ পড়ে কথা বলবো।’ এই বলে তিনি ফোন কেটে দেন।এরআগে শনিবার (১৩ জুলাই) এ অভিযোগের ব্যাপারে উত্তর যশলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামীমা আক্তার বলেছিলেন, ‘আমি ছাত্রীকে স্কুল থেকে বের করে দেইনি। তবে তাকে কয়েকদিন স্কুলে আসতে নিষেধ করেছিলাম। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্কুলে আসতে বলেছি। লৌহজং থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মো. আলমগীর হোসাইন বলেন,‘নির্যাতিত শিশুটিকে প্রধান শিক্ষিক স্কুল থেকে বের করে দিয়েছেন শুনে আমরা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি জানিয়েছি।’ বিষয়টির আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তিনি। প্রসঙ্গত রবিবার ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার ধর্ষক আলাউদ্দিন হাওলাদার (৫৫) ও সালিশকারী খলিলুর রহমান শেখকে কোর্টে হাজির করা হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টার দিকে তাদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করা হলে রবিবার বিচারের দিন ধার্য করেন আদালত। রবিবার তাদের ধর্ষণের অভিযোগে শুক্রবার বিকালে লৌহজং থানায় তিন জনকে আসামি করে মামলা করেন ভুক্তভোগী শিশুর মা। উল্লেখ্য গত ২৪ জুন সকাল সাড়ে ১০টা দিকে প্রতিবেশীর বাড়িতে যাওয়ার সময় আলাউদ্দিন হাওলাদার ওই শিশুকে আটকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ছেড়ে দেয়। ওই শিশু বাসায় এসে তার মাকে সব জানায়। পরে তার মা স্থানীয় মাদবর খলিলুর রহমান শেখ ও করিম ছৈয়ালকে বিষয়টি জানালে তারা আপোষ মীমাংসার কথা বলে ধর্ষণের আলামত নষ্ট করে। কিছুদিন পর তারা বিষয়টি পুলিশ বা অন্য কাউকে জানাতে নিষেধ করে আলাউদ্দিনকে বাঁচানোর জন্য। পরে শুক্রবার বিকালে লৌহজং থানায় তিন জনকে আসামি করে মামলা করেন নির্যাতিতা শিশুর মা। মামলার তিন আসামি হলেন, ধর্ষক আলাউদ্দিন হাওলাদার (৫৫) ও সালিশকারী খলিলুর রহমান শেখ, করিম ছৈয়াল।