একে তো চিকিৎসা সেবা সংকট, তার ওপর আবার দালালের উপদ্রবে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের হয়েছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। সর্বত্র দালালের দৌরাত্ম্য চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দালালরা রোগী নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জানা গেছে, চিকিৎসকের কাছে রোগী পৌঁছানোর আগেই দালালদের নির্ধারিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রেডি রিপোর্টসহ দালালরা রোগীদের চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।
হাসপাতালের ভর্তি রোগীদেরও দালালরা ভাগিয়ে নিয়ে কমিশনের চুক্তিতে নির্ধারিত কিছু সেবা কেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছে। আবার হাসপাতালটির চিকিৎসকদের যোগসাজশে প্রাইভেট চেম্বারে যেতে রোগীদের পরামর্শ দিচ্ছে দালালরা, বিনিময়ে পাচ্ছে মোটা অংকের কমিশন।
এই পটিয়ে নেওয়ার কাজটি করছে হাসপাতালের কতিপয় নার্স ও দালাল। এছাড়াও রোগীরা আরও অভিযোগ করেন, ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিগণ চিকিৎসকদের কমিশন দিয়ে নিজেদের ঔষধের নাম লেখিয়ে নিচ্ছে রোগীর ব্যবস্থাপত্রে। এতে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে এই হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও পূর্বের ৩১ শয্যার জনবল নিয়েই কার্যক্রম চলছে। ৫০ শয্যার নতুন ভবন উদ্বোধন করা হয় ২০০৭ সালে।
জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হাসপাতালটি অবস্থান করায় লৌহজং ও সদর উপজেলাসহ আশেপাশের কয়েকটি উপজেলার মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। বর্তমানে হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ৬শ থেকে সাড়ে ৭শ রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। তবে তীব্র তাপদাহে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
১০-১৫ জন রোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। টিকিট যুদ্ধ শেষ করে চিকিৎসক পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রতি রোগীর দেড় থেকে ২ ঘণ্টা সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
তারপর এখানে হৃদরোগ, নাক, কান, গলা, চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। হাসপাতালে শুধু রক্ত ও মলমূত্র পরীক্ষা করা যায়। মাঝেমধ্যে এক্স-রে করা হয় অন্য সব পরীক্ষাগুলো বাহিরের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করতে হচ্ছে। তাই ভালো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেনা তারা।
চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে লাইনে থেকেও ভালো করে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাচ্ছেনা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর চিকিৎসকের কক্ষে যেতে পারলেও এক সাথে ২-৩ জন রোগীকে ২ মিনিটের মধ্যেই কোনোরকম দেখে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিচ্ছেন। তাও আবার হাসপাতালে ঔষধ পাওয়া যাচ্ছেনা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আবুল বাশার বলেন, যে চিকিৎসকরা এখানে নিয়োগ নিয়ে অন্য জায়গায় প্রেষণে আছেন, তাদের পদগুলো শূন্য ঘোষণা করা দরকার।
সিভিল সার্জন ফজলে রাব্বি বলেন, কিছুদিন হয়েছে আমি এই জেলায় এসেছি। খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কিছু সমস্যা আছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর কর্মকর্তাদের নিয়ে কিছুদিনের মধ্যে বসবো । তাদের কাছ থেকে সমস্যাগুলোর তালিকা নিয়ে অতিদ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।